গণনজরদারির দুনিয়া ও পার্মানেন্ট রেকর্ড কথন

পার্মানেন্ট রেকর্ড

আপনি কী আপনার স্মার্ট ফোনটি ১০ মিনিটের জন্য আনলক করে অন্যের হাতে দেবেন?

এই প্রশ্নের বেশীরভাগের উত্তর হবে,না। কারণ কী? আমরা প্রত্যেকেই চাই ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা। বিশ্বব্যাপী মার্কিন গণনজরদারির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষার জন্যই বিদ্রোহী হয়েছিলেন অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন।

অথচ তিনি অনায়াসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বড় কর্তা হতে পারতেন। বান্ধবী লিন্ডসিকে নিয়ে কাটতে পারত আয়েশি জীবন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ফেরারী জীবন কেন তিনি বেছে নিলেন? এর উত্তর মিলবে স্নোডেনের আত্মজীবনী ‘পার্মানেন্ট রেকর্ড’ এ। চলতি বছরে আমার পড়া দ্বাদশ বই এটি।

স্নোডেন লিখেছেন তার শৈশব ও কৈশোরের ঘটনাবলী। কিভাবে তিনি বেড়ে উঠেছেন। কিভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে গিয়েও অদৃষ্টের ফেরে ফিরে আসতে হলো।

পার্মানেন্ট রেকর্ডে তিনি লিখেছেন, সেনা হতে না পারলেও ৯/১১ কিভাবে তাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ তে কাজের সুযোগ করে দেয়।

কম্পিউটার প্রযুক্তির অগাধ পারদর্শীতা আর মার্কিন সরকারের কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গোয়েন্দাদের নতুন উদ্যোগ তাকে সুযোগ করে দেয় পৃথিবীর সবচেয়ে স্পর্শকাতর আঙিনা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সিতে পা রাখার।

কিভাবে পৃথিবী জুড়ে চলে এনএসএর প্রযু্ক্তির নজরদারি তা তিনি কাছ থেকে শুধু দেখেছেন তা নয়; তিনি নিজেই গড়ে দিয়েছেন এর ব্যবস্থাপনার খুঁটিনাটি। শুরুতে এসব কাজকে তিনি দেশ সুরক্ষার জন্য দেশের কাজ ভাবলেও তিনি দ্রুত বুঝতে পারেন এতে জনগনের উপকারের মাত্রা কম। বরং সরকার তার ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করতে এসব তথ্যের ব্যবহার করছে। এবং ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য এগুলো সংরক্ষণ করছে। আদতে তিনি দেশের না; কাজ করছেন সরকারের জন্য। যা মার্কিন সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। এটিই তাকে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী করে তুলে।

বিদ্রোহী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস নিয়ে পাড়ি জমান হংকং। প্রমাণ তুলে দেন ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ানের দুই সাংবাদিকের হাতে। সেখান থেকে ইকুয়েডর যাওয়ার পথে মার্কিন সরকার বাতিল করে পাসপোর্ট। শেষ পর্যন্ত প্লেনের যাত্রাবিরতির দেশ রাশিয়াতেই গাড়তে হয় তার ঠিকানা।

দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা জীবন, সেখান থেকে পলায়নের মাঝেই তার বান্ধবী লিন্ডসির বর্ণনা বইটিকে শুধু আত্মজীবনীতে আবদ্ধ করেনি; দিয়েছে রোমান্টিক উপন্যাসের স্বাদ। বইটির নাম পার্মানেন্ট রেকর্ড; কারণ অন্তর্জাল/স্মার্টফোন দুনিয়ায় কোনো ছবি/ভিডিও/তথ্যই মুছে দেয়া সম্ভব নয়। ডিলিট অপশন শুধু আপনার থেকে কন্টেন্টকে আড়াল করার ব্যবস্থা।

বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ফ্রিডম অফ প্রেস ফাউন্ডেশনে।

রিভিউটি লিখেছেন, নাজমুস সাকিব। প্রথম প্রকাশিত হয়েছে মুক্তবাক ডট কমে

Leave a Reply