যে বেদনাদায়ক গল্প এ বইতে রয়েছে তা শুধু ক্ষমতার খামখেয়ালিপনা আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ নয়, নয় ভারতীয় রাষ্ট্রের নিছক অনৈতিকতার ভয়ঙ্কর উপাখ্যান। কীভাবে সমাজের তথাকথিত স্তম্ভগুলো—চতুর্থ স্তম্ভের সাথে একজোট হয়ে সুস্পষ্ট অবিচার নিয়ে আসে তার একটি হতাশাজনক চিত্র।
ইফতিখারের মতো একজন নম্র ভদ্র মানুষকে অনেক কষ্ট এবং অপমান সহ্য করতে হয়েছে এবং তার অক্ষত মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে চরম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি তার গল্প সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে এখানে বলেছেন যা সাংবাদিক হিসেবে তার নৈপ্যুণ্যের পরিচয় বহন করে। এখানে প্রচুর করুণ ও নোংরা হাস্যরস রয়েছে। ইফতিখার সাংবাদিক হিসেবে তার দক্ষতা দিয়ে তার নিজের মামলার তাৎপর্য ও বিশেষত্বকে ছাড়িয়ে গেছেন আর আমাদের নিয়মের শিকারদের দুর্দশাকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছেন। যে গল্প তিনি এখানে বলেছেন তা শুধু তার নিজের গল্প নয়, সেসব দুর্ভাগাদেরও গল্প যারা ওএসএ এর অধীনে যেন তাসের মামলায় আটকে আছে। তাদের গল্প, যাদেরকে আমাদের কারাগারে অত্যাচার করা হয়েছে, মারা হয়েছে। তাদের গল্প, যারা কারাগারের ধর্ষকামী কর্মকর্তাদের অমানবিকতার স্বীকার।
সিদ্ধার্থ ভরদ্বাজ
The Wire পত্রিকার সম্পাদক
Kulsuma Mily –
#বুক_রিভিউ
কারাগার নিমিত্তেই অত্যাচার আর জুলুমের শিকার কোনো এক আস্তানা। কখনো দোষীদের বাসস্থান হয় কখনো বা নির্দোষী। আইন সবার জন্য সমান তবে কখনো কখনো আইনের মানুষরা সেই আইনের অপব্যবহার করে অপদস্ত করে, মানসিক টর্চার করে, পরিবার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। এই বইটি সে রকম একজন নম্র ভদ্র আর অসাধারণ মানবের সাত মাসের কারাগারের গল্প যার প্রতিটি পাতায় পাতায় রয়েছে আবেগ অনুভূতি আর কষ্ট।
বইটি যা নিয়ে লেখা-
যে বেদনাদায়ক গল্প এ বইতে রয়েছে তা শুধু ক্ষমতার খামখেয়ালিপনা আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ নয়, নয় ভারতীয় রাষ্ট্রের নিছক অনৈতিকতার ভয়ঙ্কর উপাখ্যান। কিভাবে সমাজের তথাকথিত স্তম্ভগুলো চতুর্থ স্তম্ভের সাথে একজোট হয়ে সুস্পষ্ট অবিচার নিয়ে আসে তার একটি হতাশাজনক চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে বইটিতে। লেখক ইখতিয়ার গিলানি ছিলেন কাশ্মীর টাইমসের নয়াদিল্লি ব্যুরো চীফ এবং কাশ্মীর হুরিয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির জামাতা। ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সৈন্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি বাতিল কাগজ পান তার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে। কারাগারে দীর্ঘ সাত মাসে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লক আপের সময় প্রচন্ড অত্যাচারে অসুস্থ হয়ে গেলেও ডাক্তারে নিয়ে যাওয়া হতো না, বিশ্বাসঘাতক বলে অকথ্য গালিগালাজ করতো। গিলানি একজন ন্যায়পরায়ণ সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও তাকে অক্ষত ও অমর্যাদার চরম পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
” ভারতের কারাগারে দিনগুলো ” নিছক একটি গল্পের বই নয়; যে গল্প তিনি এখানে বলেছেন তা শুধু তার নিজের গল্প নয়, সে সব দূর্ভাগাদেরও গল্প যারা ওএসএ এর অধীনে যেন তাসের মামলায় আটকে আছে। তাদের গল্প যাদের কারাগারে অত্যাচার করা হয়েছে মারা হয়েছে। তাদের গল্প যারা কারাগারে ধর্ষকামী কর্মকর্তাদের অমানবিকতার স্বীকার।
আলোচনা সমালোচনা-
আমরা কত রকমের বই পড়ি তবে এরকম ক্যাটেগরির বই আমাদের সামনে কমই আসে। প্রজন্ম প্রকাশনী মানেই এসব অসাধারণ বইয়ের সমাহার। বইটির অনুবাদ সহজ এবং সাবলীল ভাষায় এক কথায় অসাধারণ। মলাট পেপারব্যাক হলেও প্রচ্ছদ টা অসম্ভব সুন্দর নজরকাড়া। একজন উচ্চপদস্থ সাংবাদিকের জীবনে ঘটে যাওয়া সাত মাসের কারাবাসের অসাধারণ একটি বই আমাদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ প্রজন্মকে। প্রকাশনী এবং বইটি সফলতা কামনা করছি।
বইঃ ভারতের কারাগারে দিনগুলো
লেখকঃ ইফতিখার গিলানি
রুপান্তরঃ বিনতে আফজাল
প্রচ্ছদঃ Wahid Tusar
প্রচ্ছদ মূল্যঃ ২৫০/-
প্রকাশনীঃ প্রজন্ম পাবলিকেশন
প্রকাশকালঃ আগষ্ট ২০২১