আমরা যেভাবে কাজ করি, তা আসলে আর আগের মতো কার্যকর নয়। যদি আপনার একটি চাকরি থাকে, সম্ভবত আপনি সকালে অফিসে যেতে খুব একটা খুশি হন না। অফিসে থাকাকালীন আপনি নিজেকে যথেষ্ট মূল্যবান মনে করেন না, নানা রকম বিশৃঙ্খলার মাঝেও আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করা কঠিন মনে হয়। আপনি এটাও বিশ্বাস করেন না যে, আপনি যা করছেন, তার কোনো বড় পরিবর্তন আসছে।
যখন আপনি বাড়িতে ফেরেন, তখন আপনার শক্তি প্রায় শেষ হয়ে যায়, তবুও ঘুমানোর আগ পর্যন্ত ইমেলের জবাব দিতে হয়। এই অভিজ্ঞতা এখন শুধু সাধারণ কর্মচারীদের নয়, বড় বড় কর্মকর্তাদেরও জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
আমাদের কোম্পানি, The Energy Project, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং তাদের নেতাদের কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ এবং দীর্ঘস্থায়ী কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রায় এক বছর আগে, কয়েক বিলিয়ন ডলারের রাসায়নিক কোম্পানি Albemarle-এর প্রধান নির্বাহী লুক কিসাম (Luke Kissam) আমাদের একজন, টনির কাছে একজন কোচ হিসেবে আসেন। তার জীবনে তখন সবকিছু যেন এলোমেলো লাগছিল। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমার মনে হতো, আমি যা-ই করছি না কেন, আমাকে সব সময় অন্য কোনো দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হতো আমি সব সময় কাউকে না কাউকে ঠকাচ্ছি – আমার কোম্পানি, আমার পরিবার, এমনকি নিজেকেও। আমি কোনো কিছুতেই পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারতাম না।”
লুক কিসাম একা নন। শ্রীনিবাসন এস. পিল্লাই, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহকারী অধ্যাপক যিনি বার্নআউট (মানসিক ক্লান্তি) নিয়ে গবেষণা করেন, সম্প্রতি ৭২ জন জ্যেষ্ঠ নেতার ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। তিনি দেখেছেন, প্রায় সবাই বার্নআউটের লক্ষণগুলো প্রকাশ করেছেন এবং প্রত্যেকেই কাজের ক্ষেত্রে এর অন্তত একটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া, ২০১৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকায় মাত্র ৩০% কর্মচারী কাজে নিজেদের যুক্ত মনে করে। সারা বিশ্বে, ১৪২টি দেশে এই হার মাত্র ১৩%। সহজ কথায়, আমাদের অধিকাংশের কাছেই কাজ হলো এক ক্লান্তিকর, হতাশার অভিজ্ঞতা, এবং পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে চাপ কেন বাড়ছে?
বর্তমানে আমাদের সময় ও শক্তির চাহিদা এতটাই বেড়ে গেছে যে, আমাদের দক্ষতা ও প্রতিভাকে কাজে লাগানোর মতো শক্তি আর থাকে না। এর মূল কারণগুলো হলো:
প্রতিযোগিতা ও কম কর্মী: বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে এবং কর্মী সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাপ বাড়ছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব: মোবাইল ও ইন্টারনেটের কারণে আমরা দিন-রাত সব সময় ইমেল ও মেসেজের জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছি।
এই বিষয়গুলো আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
কর্মীদের সুখ ও উৎপাদনশীলতার রহস্য
কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ (Engagement) এবং উৎপাদনশীলতা কী কারণে বাড়ে, তা বুঝতে আমরা হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের সাথে একটি গবেষণা করি। এতে ১২,০০০ এর বেশি কর্মীর উপর জরিপ চালানো হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায়, কর্মীরা তখনই সবচেয়ে বেশি খুশি ও কর্মঠ হন, যখন তাদের চারটি প্রধান চাহিদা পূরণ হয়:
শারীরিক চাহিদা: কাজের মাঝে নিয়মিত বিরতি ও বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ।
মানসিক চাহিদা: কাজের জন্য প্রশংসা ও সম্মান পাওয়া।
বৌদ্ধিক চাহিদা: গুরুত্বপূর্ণ কাজে মনোযোগ দেওয়া এবং নিজের সুবিধামতো কাজের সময় ও স্থান বেছে নেওয়া।
আধ্যাত্মিক চাহিদা: নিজের পছন্দের ও দক্ষতার কাজ করা এবং কাজের মধ্যে একটি বড় উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া।
নেতৃবৃন্দ বা কোম্পানি যত বেশি কর্মীদের এই চাহিদাগুলো পূরণে সাহায্য করবে, কর্মীরা ততই কাজে উৎসাহী, অনুগত এবং খুশি থাকবে। এর ফলে তাদের মানসিক চাপও কমবে।
কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের যুক্ত রাখার সুবিধা
কাজের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ বা Engagement-এর অর্থ হলো “অংশগ্রহণ, আবেগ, উৎসাহ এবং শক্তি”। এটি এখন কোম্পানির ভালো পারফরম্যান্সের সাথে সরাসরি যুক্ত।
২০১২ সালে গ্যালপের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যেসব কোম্পানির কর্মীরা সবচেয়ে বেশি খুশি, তাদের লাভ অন্যদের চেয়ে ২২% বেশি। এছাড়া, তাদের গ্রাহক সন্তুষ্টি ১০% বেশি, এবং চুরি ও নিরাপত্তার সমস্যাও অনেক কম।
কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান টাওয়ার্স ওয়াটসনের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু কাজ করার ইচ্ছা থাকলেই ভালো ফল পাওয়া যায় না। যেসব কর্মীরা নিজেদের কাজের সাথে পুরোপুরি মিশে যেতে পারেন (Sustainably Engaged), তাদের কোম্পানির লাভ অন্যদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি হয়।
এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে কেমন অনুভব করেন, তা তাদের কাজের ধরন ও কোম্পানির সামগ্রিক সাফল্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
কর্মক্ষেত্রে ভালো লাগা, ভালো পারফর্ম করা
কর্মক্ষেত্রে মানুষ কেমন অনুভব করে, তার ওপর তার কাজের মান অনেকটাই নির্ভর করে। আমাদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, কোম্পানিগুলো যদি কর্মীদের চারটি মূল চাহিদা পূরণ করে, তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব অনেক বেশি হয়।
১. বিশ্রাম ও নতুন করে শুরু করা
যারা প্রতি ৯০ মিনিট পরপর কাজের ফাঁকে বিরতি নেন, তারা বিরতিহীন কাজ করা কর্মীদের চেয়ে ৩০% বেশি মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন। তারা ৫০% বেশি সৃজনশীল এবং ৪৬% বেশি সুস্থ থাকেন। একটানা ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে কর্মীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খারাপ হয় এবং কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। অন্যদিকে, যদি সুপারভাইজার কর্মীদের বিরতি নিতে উৎসাহিত করেন, তাহলে তাদের সেই কোম্পানিতে থাকার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।
২. কাজের মূল্য
সুপারভাইজার যদি কর্মীদের প্রতি যত্নশীল হন, তাহলে কর্মীদের মধ্যে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাস ও নিরাপত্তার অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়। যেসব কর্মীর সুপারভাইজার তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাদের সেই কোম্পানিতে থাকার সম্ভাবনা ১.৩ গুণ বেশি এবং তারা ৬৭% বেশি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেন।
৩. মনোযোগ
আমাদের গবেষণায় মাত্র ২০% কর্মী জানিয়েছেন যে তারা একবারে একটি কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। কিন্তু যারা পারেন, তারা ৫০% বেশি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেন। একইভাবে, যারা তাদের কাজকে সঠিকভাবে অগ্রাধিকার দিতে পারেন, তারা অন্যদের চেয়ে ১.৬ গুণ বেশি মনোযোগ দিতে সক্ষম।
৪. উদ্দেশ্য
যেসব কর্মী তাদের কাজের মধ্যে অর্থ বা কোনো বড় উদ্দেশ্য খুঁজে পান, তাদের কোম্পানিতে থাকার সম্ভাবনা অন্যদের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। আমাদের গবেষণায় এটিই ছিল সবচেয়ে বড় ইতিবাচক প্রভাব। এই ধরনের কর্মীদের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি ১.৭ গুণ বেশি এবং তারা ১.৪ গুণ বেশি কাজে উৎসাহিত থাকেন।
আমরা প্রায়ই বড় বড় কর্মকর্তাদের একটি সহজ প্রশ্ন করি: “যদি আপনার কর্মীরা আরও বেশি কর্মশক্তি, সম্মান, মনোযোগ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে, তাহলে কি তাদের কাজের মান ভালো হবে?” অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয়, এর উত্তরে প্রায় সবসময়ই “হ্যাঁ” আসে। এরপর আমরা জিজ্ঞাসা করি, “তাহলে এই চাহিদাগুলো পূরণের জন্য আপনারা কতটা বিনিয়োগ করেন?” এই প্রশ্নের পর সাধারণত এক অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসে।
কেন এই বৈপরীত্য?
খুব সহজভাবে বলতে গেলে, সম্প্রতি পর্যন্ত কর্মীদের পেছনে বিনিয়োগ করার প্রয়োজনবোধ কোম্পানিগুলো করেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত কর্মীরা কাজের চাহিদা মেটাতে পারতো, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অন্য কোনো চাহিদা নিয়ে ভাবার দরকার ছিল না। তবে এখন প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারছে যে, ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে তৈরি হওয়া কাজের তীব্র চাপকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
এরপরেও পুরোনো অভ্যাস এবং অলসতা কর্মীদের চাহিদা পূরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক বছর আগে আমরা একটি ফার্মের ১৫০ জন হিসাবরক্ষকের ওপর একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি চালাই, যখন তাদের কাজের অনেক চাপ ছিল। সাধারণত এমন সময়ে কর্মীরা অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করেন।
আমরা ফার্মটিকে অনুরোধ করি, একটি দলকে ভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে—যেমন, ৯০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে কাজ করার পর ১০-১৫ মিনিটের বিরতি এবং বিকেলে এক ঘণ্টার লম্বা বিরতি। এই দলের কর্মীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ শেষ হলেই বাড়ি চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
দেখা গেল, এই দলের কর্মীরা কম সময়ে বেশি কাজ করতে পারলেন এবং অন্যদের চেয়ে আগে বাড়ি ফিরতে লাগলেন। তাদের কাজের চাপও অনেক কম ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই দলের কর্মীদের চাকরি ছাড়ার হার অন্যদের চেয়ে অনেক কম ছিল।
ফার্মের কর্মকর্তারা এই ফলাফল সম্পর্কে জানতেন, কিন্তু তারা তাদের পুরোনো নিয়ম বদলাতে রাজি হননি। একজন কর্মকর্তা আমাদের বলেন, “আমরা তাদের কাজের সময় ছাড়া অন্য কোনোভাবে পরিমাপ করতে জানি না।”
সম্প্রতি সেই ফার্ম থেকেই আমাদের কাছে আবার ফোন আসে। “আপনারা কি আবার আসতে পারবেন?” একজন অংশীদার জানতে চান। “আমাদের কর্মীরা এখনো কাজের চাপে হতাশ হয়ে পড়ছে।”
বিশ্বাস ও বিনিয়োগের অভাব
কোম্পানিগুলোর জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্বাস। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মীরা তাদের কাজের সময় ও স্থান বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা চান এবং এমন স্বাধীনতা পেলে তাদের কাজের আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু অনেক কোম্পানি মনে করে, কর্মীদের ওপর কড়া নজরদারি না রাখলে তারা কাজ করবে না। এই ধারণা কর্মীদের আস্থাকে নষ্ট করে দেয় এবং কাজের আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান প্রথমে তার কর্মীদের গুরুত্ব দেয়—গ্রাহকদের চেয়েও বেশি। কারণ তারা জানে, কর্মীরাই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। উদাহরণস্বরূপ, Costco তার কর্মীদের প্রতি ঘণ্টায় ২০.৮৯ ডলার বেতন দেয়, যা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী Walmart-এর চেয়ে ৬৫% বেশি। কর্মীদের প্রতি Costco-এর এই বিনিয়োগ, যেমন পার্ট-টাইম কর্মীদেরও সুবিধা দেওয়া, তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
Costco-এর কর্মীরা Walmart-এর কর্মীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিক্রি করে। যারা কমপক্ষে এক বছর কাজ করেন, তাদের মধ্যে Costco-এর চাকরি ছাড়ার হার মাত্র ৫%, যা Walmart-এর চেয়ে অনেক কম। এর ফলে নতুন কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের খরচ কমে যাওয়ায় Costco প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় করে। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে Costco-এর শেয়ারের দাম ২০০% এর বেশি বেড়েছে, যেখানে Walmart-এর বেড়েছে মাত্র ৫০%।
পরিবর্তনের কারণ
কোম্পানিগুলো কখন কর্মীদের পেছনে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে?
একটা বড় কারণ হলো সমস্যা। অনেক সময় কোম্পানিগুলো আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, যখন তারা তাদের মূল্যবান কর্মীদের হারাতে শুরু করে, অথবা কোনো সিইও নিজের মানসিক অবসাদ বুঝতে পারেন, অথবা কোনো তরুণ কর্মকর্তা হঠাৎ হৃদরোগে মারা যান—গত ছয় মাসে আমরা এমন অনেক গল্প শুনেছি।
একটি সংখ্যা-নির্ভর বিশ্বে পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হলো, কর্মীদের চাহিদা পূরণ করলে তাদের উৎপাদনশীলতা, আনুগত্য এবং কাজের মান বাড়ে—এর সপক্ষে এখন প্রচুর প্রমাণ আছে। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, ক্রমশই আরও বেশি কোম্পানি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছে। তারা সাধারণত কর্মীদের শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুস্থতা কর্মসূচি দিয়ে শুরু করে। তবে, কর্মীদের কাছ থেকে বেশি কাজ আদায় করার পরিবর্তে তাদের পেছনে বিনিয়োগ করার মানসিকতা এখনো খুব কম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেখা যায়।
কোম্পানিগুলো খুব সহজ একটি প্রশ্ন দিয়ে এই পরিবর্তন শুরু করতে পারে: “কোন বিষয়গুলো আমাদের কর্মীদের আরও বেশি কর্মঠ, যত্নশীল, মনোযোগী এবং অনুপ্রাণিত করবে?” উদাহরণস্বরূপ, মিটিং ৯০ মিনিটের বেশি না করা, অথবা ইমেল কখন উত্তর দিতে হবে তার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া—এসবের কোনো খরচ নেই। এছাড়া, কর্মীদের জন্য ফিটনেস সেন্টার, বিরতির ঘর তৈরি করা এবং স্বাস্থ্যকর খাবার বিনামূল্যে বা কম মূল্যে সরবরাহ করার মতো পদক্ষেপও নেওয়া যেতে পারে, যা এখন সিলিকন ভ্যালির অনেক কোম্পানি করে থাকে।
সহমর্মী নেতৃত্ব: কর্মীদের উৎসাহিত করার উপায়
নেতা ও ম্যানেজারদের মধ্যে যখন সহানুভূতি, মমতা এবং বিনয় দেখা যায়, তখন কর্মীরা অনেক বেশি উৎসাহিত হন। যেসব নেতা রাগ বা অন্যান্য নেতিবাচক আবেগ দিয়ে কর্মীদের পরিচালনা করেন, তারা হয়তো সাময়িকভাবে ভালো ফল পেতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা কর্মক্ষেত্রে একটি ভীতিকর ও ক্ষতিকর পরিবেশ তৈরি করে। এর ফলে কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন।
আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মীরা তখনই সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত হন, যখন তারা এমন কাজ করার সুযোগ পান যা দিয়ে পৃথিবীর কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
নেতাদের কর্মশক্তি সংক্রামক। যখন কোনো নেতা কর্মীদের আরও ভালোভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করেন এবং নিজেও সেই উদাহরণ তৈরি করেন, তখন কর্মীরা ৫৫% বেশি উৎসাহিত হন, ৫৩% বেশি মনোযোগী থাকেন এবং কোম্পানিতে থাকার সম্ভাবনাও তাদের বেড়ে যায়।
একটি বাস্তব উদাহরণ: লুক কিসামের গল্প
লুক কিসাম, Albemarle-এর প্রধান নির্বাহী, যাঁর কথা আমরা আগে বলেছি, তিনি নিজে এবং তার কর্মীদের জন্য এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রথমে নিজের রুটিন পরিবর্তন করেন। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে তিনি হাঁটাচলার জন্য বিরতি নেওয়া শুরু করেন এবং পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময়ে পুরোপুরি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি সকাল তিনি নিজের জন্য রাখেন, যখন তিনি শুধু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবেন। এছাড়া, তিনি কোম্পানির ভেতরে ও বাইরে থাকা মানুষদের হাতে লেখা ধন্যবাদ নোট পাঠানো শুরু করেন।
লুক কিসাম তার প্রতিষ্ঠানের মিটিং, ইমেল, কাজের নমনীয়তা (flexible work arrangements), বিরোধ মীমাংসা এবং কর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়াগুলো নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে তার প্রতিষ্ঠানের ১,০০০ এর বেশি নেতা ও ম্যানেজার একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন, যেখানে তাদের নিজেদের এবং অধীনস্থদের চাহিদা কীভাবে পূরণ করতে হয়, তা শেখানো হয়।
কিসাম বলেন, “আমি এর ফল দেখতে পাচ্ছি। এ বছর আমাদের নিরাপত্তা রেকর্ড অনেক ভালো হয়েছে, কারণ আমাদের কর্মীরা এখন বেশি মনোযোগী। আমরা তাদের ওপর বিশ্বাস রাখছি, তাদের বলে দিচ্ছি না কী করতে হবে, এবং তাদের প্রচেষ্টার জন্য আমরা তাদের প্রশংসা করছি। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো হচ্ছে। আমি দেখলাম, যখন আমি নিজের ওপর বিনিয়োগ করলাম, তখন কী হলো; আর এখন আমরা দেখছি, যখন আমরা আমাদের কর্মীদের ওপর বিনিয়োগ করছি, তখন কী ফল পাচ্ছি।”
লেখক: টনি শোয়ার্টজ ও ক্রিস্টিন পোরাথ
Why You Hate Work শিরোনামে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত।