মধ্যরাত। ইসলামাবাদ, ৩১ জানুয়ারি ২০০২।
সুনসান বাড়ি। যায়নাব আর আমাদের বাচ্চাকাচ্চা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। লম্বা একটা দিন কেটেছে ওদের। কাবুল থেকে ওর একজন বান্ধবী তার দুই সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসেছেন আমাদের বাড়িতে, তারাও ততক্ষণে শুয়ে পড়েছেন। আমি তখনও জেগে—কম্পিউটারে একটা চিঠি টাইপ করছিলাম; তার পর গেইম খেলতে শুরু করে দিলাম। ডোরবেলের আওয়াজে ঘড়ির দিকে তাকালাম। প্রথমে ভেবেছিলাম—কেউ বুঝি ভুল করে চলে এসেছে; নয়তো আশপাশের কারও ইমার্জেন্সি কোনো প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
ভয় পাচ্ছিলাম না, যদিও কিছুটা অদ্ভুত লেগেছিল ওই সময়ে বেল বাজার কারণে। দরজা খুলে দিলাম। আমার মোজা পরা পা দুটো ওখানেই স্তব্ধ হয়ে রইলো। দেখলাম, একদল মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আমার দরজায় আর প্রথম যে জিনিসটা বুঝতে পারলাম, সেটা হচ্ছে—আমার মাথায় একটা অস্ত্র ধরে রাখা হয়েছে। সামনের খোলা দরজা দিয়ে আমাকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হলো লিভিং রুমের দিকে, ঠিক যেখানে আমার শান্ত সন্ধ্যার পরিসমাপ্তি ঘটে গেল ক্রমেই ঘনিয়ে উঠতে থাকা আতঙ্ক আর শঙ্কার মধ্য দিয়ে। আমাকে হাঁটু ভেঙে বসতে বাধ্য করা হলো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল অদ্ভুত-দর্শন, দুর্বোধ্য একদল লোক, যাদের কেউই পুলিশী পোশাকে ছিল না; সবাই ছিল সাধারণ পাকিস্তানী আর প্রত্যেকের পরনেই ছিল পশ্চিমা পোশাক।
একটা শব্দও বেরুলো না ওদের মুখ থেকে। এমনকি আমাকে জিজ্ঞেসও করল না আমি কে। আমি তো যে কেউ-ই হতে পারি! নতজানু অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল আমাকে। এমন সময় চোখের কোণা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম কয়েকজন আমার স্ত্রী আর পরিবারের অন্য সদস্যরা যে রুমগুলোতে শুয়ে আছে সেদিকে যেতে শুরু করেছে। তাদেরকে রক্ষার এক তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টা হিসেবে বলে উঠলাম—“ওদিকে যাবেন না প্লিজ, আমার পরিবার ওখানে ঘুমিয়ে আছে।”
তারপর আর কিছু দেখতে পেলাম না। ওরা আমার মাথায় কাপড়ের হুড পরিয়ে দিলো। হাত দুটো পেছনে টেনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দিলো। গোড়ালি শক্ত করে বাঁধা হলো ফ্লেক্সিকাফ দিয়ে। আমাকে বয়ে নিয়ে তোলা হলো ড্রাইভওয়েতে পার্ক করে রাখা গাড়িতে। কোনো প্রতিবেশী জেগে থাকলেও জানার সুযোগ ছিল না এখানে কী ঘটছে। বাড়িটা ছিল অন্যসব বাড়ি থেকে আলাদা আর দেয়াল ও গেইটগুলোও ছিল যথেষ্ট উঁচু।
চার বাই চার মাপের সমতল একটা জায়গায় আমাকে ফেলে দেওয়া হলো। গাড়ি চলতে শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কেউ একজন আমার মাথার উপর চেপে বসে থাকা হুড এতটুকু তুলে দিলো, যাতে আমি দেখতে পারি। হুট করে মুখের উপর এসে পড়লো ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইটের আলো। পেছনে দেখলাম খুব বাজেভাবে ছদ্মবেশ নেওয়া এক আমেরিকানকে, যে পাকিস্তানী পোশাক পরে আছে। মাথায় পাকিস্তানীদের মতো করে কাপড় পেঁচানো; কিন্তু নিশ্চিতভাবেই লোকটা পাকিস্তানী ছিল না। চরম বিপজ্জনক অবস্থায় থাকার পরও আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল হো হো করে হাসি; লোকটাকে হাস্যকর লাগছিলো। কোনো শব্দ করল না লোকটা, চুপচাপ আমার একটা ছবি তুললো। এবার আমার পাশেরজন এক জোড়া হ্যান্ডকাফ তুলে ধরল। সে-ও আমেরিকান, তবে প্রথমজনের চেয়ে কিছুটা ভালো কাপড়-চোপড় পরা, মাথায় আফগানী ক্যাপ। যদিও আমার হাতে আগে থেকেই হ্যান্ডকাফ লাগানো ছিল, তবু সে আমার সামনে তার হাতের কাফ জোড়া ঝাঁকিয়ে দেখাল।
—“জানো, এই হ্যান্ডকাফ আমি কোথা থেকে পেয়েছি?”
—“নো আইডিয়া। আমি কেমন করে জানবো?”
—“এটা আমাকে দিয়েছে ৯/১১-এর এক ভিক্টিমের স্ত্রী।”
শান্ত থাকলাম আমি। বললাম—“ওই মহিলা তোমাকে বোকা ভাবতে পারে; কারণ, ভুল লোককে ধরে নিয়ে যাচ্ছো তুমি।”
তারপর সে হাতকড়াগুলো আগেরগুলোর উপরে লাগিয়ে দিলো। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কিছু। বুঝতে পারছিলাম না—এসব কি আসলেই ঘটছে?
আমি পাকিস্তানীদের কাছে অনুরোধ করতে চেষ্টা করলাম। স্থানীয় হিসেবে তাদের সাথে কথা বললাম উর্দুতে। আমেরিকানরা অবশ্য আমার সাথে পরিচিত ছিল না। আমি তাদের বললাম—“দেখো, যদি আমি অন্যায় কিছু করেই থাকি, তাহলে যা করার, বৈধ পন্থায় করো। আমাকে ব্রিটিশ কনসালের সাথে যোগাযোগ করতে দাও, অথবা একজন আইনজীবীর ব্যবস্থা করে দাও, আর আমার পরিবারের সাথে একটু যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দাও। আমার ফোনটা দাও, আমি জানতে চাই—ওরা সবাই ঠিক আছে কি না।” আমি তাদের কাছে এভাবে নিজের পক্ষে ওজর পেশ করেই যাচ্ছিলাম আর এদিকে গাড়ি চলছিলো তো চলছিলোই। ওরা আমাকে এভাবে স্রেফ উপেক্ষা করে চলছে, এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। এভাবেই আমরা পথ চলছিলাম, কিন্তু দশ মিনিটের জন্য এক জায়গায় গাড়িটা থেমে গেলো।
প্রথমে আমেরিকানদের সামনে পাকিস্তানীরা কিছু বলছিলো না। তারা এমনকি কোনোরকমের প্রতিক্রিয়া পর্যন্তও দেখায় নি। নিজেদেরকে কাঠখোট্টা ও শক্ত বানিয়ে রেখেছিলো লোকগুলো। আমি ওদের সাথে কথা বললাম উর্দু রীতিতে। বয়সে বড়ো—যাদেরকে আমরা ‘আঙ্কেল’ বলে ডাকি—তাদের কারও সাথে যেভাবে কথা বলতে হয়, সেভাবেই কথা বললাম ওদের সাথে। কিন্তু ওরা ঠাণ্ডা আর নিরুত্তর হয়ে বসে রইলো। এটা পাকিস্তানীদের স্বভাব-চরিত্রের সাথে একেবারেই খাপ খায় না, বড়োই বেখাপ্পা আচরণ।
কিন্তু এটা ছিল এক গুপ্ত দুনিয়া, এবং আমাকে সম্পূর্ণ সরকারি অনুমোদনে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লোকগুলোর নীরবতা আর অদ্ভুত টেনশনে ভরা পুরো পরিবেশ আমার কাছে এই অনুমোদনের ব্যাপারটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলো। আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে, লোকগুলো খুব চাপের মধ্যে আছে।
ওরা আমাকে গাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এলো। খুব সম্ভবত আমেরিকানরা ছিল ওদের পেছনে (ওদের হ্যান্ডকাফ ফেরত নেওয়ার পর); ওদেরকে এর পর আর দেখা যায়নি। আমার মনে হলো ওরা আমাকে ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের কোনো একটা ফ্যাসিলিটিতে নিয়ে এসেছে। ভাবছিলাম, হয়তো আমাকে কোনো সেলে রাখা হবে এখন। বাস্তবে ঘটল তার উলটো। পাকিস্তানীরা আমাকে নিয়ে এলো বেশ উন্নত একটা কামরায়। একটা সোফা, একটা চেয়ার, ফ্লোরে একটা পাটির সাথে একটা লেপ, একটা বালিশ এবং একটা জানালাও ছিল ওই রুমে। কিন্তু ওরা চটপট জানালাটা মাস্কিং টেপ দিয়ে ঢেকে দিলো, যাতে বাইরের জগতে আমি চোখ বুলাতে না পারি। এর পর প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো আমাকে। ফর্মাল কিছু প্রশ্ন; যেমন—নাম কী? ঠিকানা কোনটা? কোথায় কোথায় গিয়েছি? পাকিস্তানে এখন আমি কী করছি?—ইত্যাদি সব মিলিয়ে দশটার বেশি প্রশ্ন হবে না। প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করল সেই লোকটা, গাড়িতে যাকে আমি ‘আঙ্কেল’ বলে ডেকেছিলাম। লোকটার কাছে একটা সাদা এ-ফোর সাইজ কাগজ ছিল, তাতে সে সব তথ্য লিখে নিল। যদিও এগুলো সবই ছিল স্রেফ নরমাল ফর্মালিটিজ। সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে ঘটছিলো, অস্বাভাবিক কিছু এতে ছিল না। তবে তার চেহারায় একটা টান টান উত্তেজনা আমার নজর এড়ায়নি। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম, আমাকে আমার ঘর থেকে এভাবে তুলে নিয়ে আসার ব্যাপারে তাকে নিজের সাথে নিজেকে লড়তে হচ্ছে। প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছিলো লোকটা।
প্রথম যে জিনিস সে আমাকে বলল, সেটা হলো, “দেখো বেটা, আমি জানি না তুমি কী করেছ এবং কেন তোমাকে আমেরিকানরা এত মরিয়া হয়ে পেতে চাইছে। কিন্তু তুমি দেখতে পাচ্ছো আমি তোমাকে কোনো সেলে না নিয়ে এরকম একটা রুমে নিয়ে এসেছি। আমি জানি তুমি পাকিস্তানের ভেতর অন্যায় কিছু করোনি এবং এই মাঝরাতে তোমার বাড়িতে যাওয়াটা আমার কাছে খারাপ লেগেছে। আমি দেখেছি তোমার বাড়ি কেমন, দেখেছি তোমার পরিবার কেমন। কোনো ঝামেলা বাঁধাবার মতো লোক মনে হয়নি তোমাকে।” লোকটা বলে চলল, “একমাত্র আমেরিকানদের জন্যই আমরা এটা করতে বাধ্য হয়েছি।”
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনারা যদি মনে করেই থাকেন আমি কোনো কিছু করিনি, তবে যা করিনি তার জন্য কেন আপনারা ওদের কথামতো কাজ করছেন? কেন আপনারা আমার সাথে এমনটা করলেন, কেনই বা আপনারা আমেরিকানদের খুশি করতে এত কষ্ট করছেন?”
“যদি আমরা এমনটা না করি, তাহলে প্রেসিডেন্ট বুশের বাহিনী আমাদের উপর শক্ত আঘাত হানবে। তুমি তাদের বক্তব্য শোনোনি, “হয় আমাদের পক্ষে নয়তো আমাদের বিপক্ষে”? অতএব, কোনো না কোনো পক্ষ আমাদের নিতেই হচ্ছে।” আমি তখনই ধরে ফেললাম যে, এরা হচ্ছে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’-এর লোক। এরা ছাড়া আর কে-ই-বা আছে, যারা ফুল আমেরিকান সাপোর্টে আমাকে এভাবে কিডন্যাপ করতে পারে?
ইতোমধ্যে আমার হ্যান্ডকাফ খুলে নেওয়া হয়েছে। সেই সাথে ফ্লেক্সিকাফটাও কেটে দেওয়া হয়েছিল, তবে বেশ কিছুটা সময় খরচ হয়েছে এতে। ভোঁতা একজোড়া কাঁচি ব্যবহার করে একজন গার্ড কেটে দিচ্ছিল ওগুলো। রুমে কিছু মেরামতি চলছে দেখতে পেলাম। দেয়ালে একটা গর্ত, ওখানে কয়েকটা ইট নেই হয়ে গেছে। ওই ফাঁকটা দিয়ে আমি বাইরে দেখতে পাচ্ছিলাম। কথাবার্তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর গার্ড রাতের জন্য আমার হাত একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখল। যদিও মুখে কিছু বলেনি সে, তবুও কারণটা মোটামুটি স্পষ্টই ছিল। যাই হোক, হাতকড়াটা এত বড় ছিল যে আমি সহজেই এর মধ্য দিয়ে হাত পিছলে বের করতে পারছিলাম। গার্ড বেরিয়ে যাওয়ার পরই বাকি রাত আমি হাতটা বের করে রাখলাম। অবশ্য কেউ এসে পড়লেই আবার হাত ঢুকিয়ে দিতাম। আমি খুব করে চাচ্ছিলাম, এই অগ্নিপরীক্ষা ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাক। যদি কয়েক দিনেও এটা না হয়, তাহলে হয়তো এটা একটা মিসটেক। তাই আমি পালানোর কথা ভাবছিলাম না; অন্তত তখন পর্যন্ত না।
চেয়ারে টানটান হয়ে বসে পকেটে হাত ঢোকালাম। মোবাইলের অস্তিত্ব ঠেকল হাতে। আমি কম্পিউটারের সামনে বসা ছিলাম, যথারীতি এটাও আমার পকেটেই ছিল। ওরা একবারও আমার দেহ তল্লাশি করেনি। ফোনটার কথা আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম, কিন্তু এখন এটাকে মনে হতে লাগল একটা সত্যিকারের লাইফলাইন। প্রথম যে কাজটা আমি করলাম, তা হলো, ফোন দিলাম আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুকে। মোটামুটি কাছাকাছিই থাকত সে। তখন প্রায় দুটো বাজে। ঘুমে ভরা কণ্ঠে ফোন ধরল সে। ফিসফিসিয়ে আমি তার সাথে কথা বলতে শুরু করলাম এবং আশ্চর্যজনকভাবে সেও আমার সাথে ফিসফিসিয়েই কথা চালিয়ে গেল। সব খুলে বললাম তাকে। জানতে চাইলাম, সে কি একবার আমার ঘরে গিয়ে দেখে আসতে পারবে কি না যে সব ঠিকঠাক আছে কি না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক দেখে, তাহলে সে যেন পাকিস্তানে থাকা আমার কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে। তারপর আমি ফোন করলাম বার্মিংহামে, আমার বাবাকে। নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমি এখান থেকে, এই বন্দীশালা থেকে একটা ইন্টারন্যাশনাল কল করতে পারছি। আবারও আমি ফিসফিসিয়ে কথা বললাম। বাবাকে জানালাম কী কী ঘটেছে আর কী কী আমি জানতে পেরেছি। আমেরিকানরা আমাকে ধরে নিয়ে আসার সময় আমার সাথে ছিল এবং তাদের অর্ডারেই যে আমাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে এটাও বাবাকে জানিয়ে দিলাম। আমি তাকে বললাম, আমার সলিসিটর গ্যারেথ পিয়ার্সকে সব জানাতে এবং পাকিস্তানে আমাদের কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে। আরও বললাম, যাইনাব আর আমার সন্তানদের কোনো নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিতে। আমি এটা ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম যে, বাবা না জানি কত চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে আমি জানতাম যে, মাত্রই উনার একটা হার্ট বাইপাস অপারেশন হয়েছে। কিন্তু এটা ছাড়া আর কী-ই-বা আমি করতে পারতাম! আসলেই জানা ছিল না আমার।
বাবা নিশ্চিতভাবেই প্রচণ্ডরকম শকড ছিলেন, যদিও উনি ফোনে আমার সাথে ফিসফিসিয়েই কথা বলছিলেন। তাই উনার গলা শুনে উনি কেমন আছেন, সেটা বুঝাটা ছিল আমার জন্য বেশ কঠিন। ইতোমধ্যে ব্যাটারির চার্জও ফুরিয়ে আসছিল আর ফোনেও একটা কল এসেছিল। ফোনে কোনো নম্বর ওঠেনি, অতএব নিশ্চিত এটা একটা আন্তর্জাতিক নম্বর। কিন্তু কলটা রিসিভ করতেই ব্যাটারিটা ডেড হয়ে গেল। রুমে প্লাগ পয়েন্ট ছিল। কার্পেট তুলতেই তারও পেয়ে গেলাম। বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমি তখন মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। এ জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম তারগুলোকে ইলেক্ট্রিসিটির সাথে জোড়া লাগাতে আর তারপর সেগুলো মোবাইলের সাথে লাইন দিতে। কিন্তু যেহেতু বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিবর্তন করার জন্য কোনো এডাপ্টার নেই, তাই সম্ভবত এটা কোনো কাজ করবে না এবং শেষমেশ মোবাইলটাকেই খতম করে দেবে।
ঘুমুতে চেষ্টা করলাম। মেঝেতে লেপ নিয়ে ম্যাটের উপর শুয়ে পড়লাম, কিন্তু ঘুম এলো না। মন অস্থির হয়ে ছিল, কী ঘটতে যাচ্ছে ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। একই সাথে যৌক্তিক চিন্তাও করছিলাম, নিজেকে বলছিলাম, শেষমেশ ন্যায়বিচারেরই জয় হবে। নিজেই নিজেকে বলছিলাম, “তুমি জানো যে তুমি ভুল কিছু করোনি। অতএব তোমার নিজেকে দোষী ভাবার কোনো কারণ নেই। অথবা এমন কিছু দায়িত্বের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই, যা তুমি করোনি।”
মাথাভর্তি চিন্তা নিয়ে আধঘুম থেকে জেগে উঠলাম। নতুন একজন লোক এসেছে। সকাল হয়ে গেছে তখন। লোকটা আমার জন্য নিয়ে এসেছে চা, পরোটা আর পায়ে দেওয়ার জন্য একজোড়া ছেঁড়া-ফাটা চপ্পল। সে আমাকে জানিয়ে গেল যে, যখনই আমার কিছু লাগবে, তখনই যেন আমি দরজায় নক করি, তাহলেই একজন গার্ড চলে আসবে। তারা এলো, কিন্তু আমি দেখলাম যে তারা কিছুই জানে না। তাই একজন অফিসারের সাথে কথা বলার জন্য আমি চাপাচাপি করতে থাকলাম।
ব্রিটিশ নাগরিক ও মানাবধিকার কর্মি মোয়াজ্জেম বেগকে প্রথমে গুম করে পরে গুয়ান্তানামোতে রাখা হয়েছিল দীর্ঘদিন। লেখকের বর্ণনায় উঠে এসেছে কথিত মানাবধিকারের বুলি আওড়ানো পশ্চিমাদের অন্তরালের খবর। বইটি পড়ুন এবং জানুন অজানা সব খবর।
লেখাটি এই বই থেকে নেওয়া হয়েছে। আরো জানতে বইটি অর্ডার করুন: