পাশ্চাত্যের ট্রান্সহিউম্যানিস্ট এজেন্ডা

পাশ্চাত্যের ট্রান্সহিউম্যানিস্ট এজেন্ডা

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে আমরা নিজেদের সন্তান নিজেই ডিজাইন করতে পারব। এটা কেমন? বর্তমান সময়ে একটা শিশু জন্মলাভ করার পরে আমরা তার কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, তার গায়ের রঙ। আরও কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য আমরা জানতে পারি অনেক বড় হওয়ার পরে। যেমন—সে লম্বা হবে নাকি খাটো হবে; মোটা হবে নাকি স্লিম হবে। অতঃপর আরও বড় হওয়ার পর আমরা তার মানসিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও জানতে পারি; সে খিটখিটে মেজাজের হবে নাকি শান্ত প্রকৃতির হবে; ইন্ট্রোভার্ট হবে নাকি এক্সট্রোভার্ট হবে।

কিন্তু ভবিষ্যতে যখন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং আমাদেরকে কোন জিনের কারণে আমরা কোন বৈশিষ্ট্য পেয়ে থাকি, সেটা জানতে সাহায্য করবে, তখন আমরা আমাদের সন্তান মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়েই তার মধ্যে সেসব জিন ইঞ্জেক্ট করানোর প্রয়াস পাব। যেমন, কেউ যদি ফর্সা সন্তান চায়, তাহলে যে জিনের কারণে মানুষ ফর্সা হয়, সেই জিনটাকে সে তার সন্তানের ভ্রূণে ইঞ্জেক্ট করাবে; একইভাবে, কারো যদি লম্বা আর স্লিম সন্তান চায়, তাহলে সে তার সন্তানের জন্য এ’দুই বৈশিষ্ট্য পাওয়ার জিনটা বাছাই করবে। আপাতদৃষ্টিতে এখানে আপত্তি থাকার মতো কোন কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না।

কিন্তু এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, আমরা আমাদের অনাগত সন্তানকে যদি নিজেদের মতো করে ডিজাইন করি এবং সে যদি এই ডিজাইনকে মেনে নিতে না পারে, তাহলে কি সে তার পিতামাতার উপর সন্তুষ্ট হবে? ঐতিহাসিকভাবে, মানুষ তার শারীরিক খুঁতগুলোকে (যেমন—খাটো, মোটা, কালো হওয়া) ঈশ্বরের ইচ্ছা বলে মেনে নিত, যদিও সে এই ব্যাপারে মনক্ষুণ্ণ থাকে। কিন্তু এই ক্ষমতাটা যদি মানুষ পেয়ে যায় এবং নিজের ডিজাইন যদি কারো পছন্দ না হয়, তাহলে তো সে তার পিতামাতাকেই এর জন্য দোষারোপ করবে। তখন কী হবে সেটা পাঠক নিজের মতো করেই ভেবে নিতে পারবেন। অন্যসব প্রযুক্তির মতো এটার নৈতিক মানদণ্ড নিয়েও একাডেমিয়াতে আলোচনা হচ্ছে। আর এই প্রযুক্তির বাইরে মানব ক্লোনিং আর ইউজেনিক্স তো আছেই, যদিও দুটো আপাতত পাশ্চাত্যেও নিষিদ্ধ।

গ্রিক পন্ডিত হোমার বলেছিলেন, “All men have need of the gods.” মানুষের যেখানে ঈশ্বরের প্রয়োজন, সেখানে তার ঈশ্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখা মস্ত বড় ভুল ছিল। মূলত, ট্রান্সহিউম্যানিস্ট প্রজেক্টে সাফল্যের কারণেই মানুষ এখন নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে শুরু করেছে। প্রকৃত ঈশ্বর আরোপিত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার বুদ্ধিমত্তা লাভ করার কারণে নিজেকেই সে ঈশ্বরের চেয়েও অধিক শক্তিশালী মনে করছে। অথচ ধর্মহীন এই প্রযুক্তি প্রয়োগের গাইডলাইন পৃথিবী থেকে তার নিজের বিলুপ্তির কারণও হতে পারে।

আমি যে কারণে সায়েন্স পড়ার পরামর্শ দেই, সেটা হলো; এই ট্রান্সহিউম্যানিস্ট এজেন্ডার পুরোটা পাশ্চাত্যের হাতে এবং এখানে কোন গাইডলাইন নেই। এটা ‘চলছে গাড়ি যাত্রাবাড়ির’ মতো। এখানে কোন প্রযুক্তি বা আবিষ্কারকে ধর্মীয় মাপকাঠি দিয়ে নয়, বরং লিবারেলিজমের সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ (সুখ-যন্ত্রণা) থেকে বিচার করা হয়। এজন্য এখানে বিজ্ঞানের চেয়ে অপবিজ্ঞান চর্চা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তাই আমাদের মুসলিম বিজ্ঞানীদেরকে এসব প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে এবং দক্ষতার দিক থেকে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীদেরকে ছাড়িয়ে যেতে হবে, যাতে বিজ্ঞানের নামে অপবিজ্ঞানের চর্চা রোধ করা যায়। প্রকৃতির আইনগুলোকে প্রকৃতির প্রতি সম্মান ও প্রকৃতিস্থ অন্যান্য এজেন্টদের অধিকার রক্ষা করেই আমাদের উপকারে প্রয়োগ করার যোগ্যতাসম্পন্ন মুসলিম বিজ্ঞানীর প্রয়োজন। আমরা বিজ্ঞানচর্চার গাইডলাইন পশ্চিমা সভ্যতার ধর্মহীন আদর্শ থেকে নিতে পারি না। একই সাথে মুসলিম সমাজবিজ্ঞানী আর দার্শনিকও প্রয়োজন, যারা এসব অপবিজ্ঞান মানবিক আর যৌক্তিক সমালোচনার মাধ্যমে রুখে দেওয়ার সক্ষমতা রাখবে।

লেখাটি এই বই থেকে নেওয়া হয়েছে। আরো জানতে বইটি অর্ডার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ক্যাশ অন ডেলিভারি

সারা বাংলাদেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা

সহজ রিটার্ণ ও রিফান্ড পলিসি

পণ্য প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে সহজ রিটার্ন সুবিধা

গ্যারান্টি ও নিশ্চয়তা

গুণগত মানের নিশ্চয়তা ও নিরাপদ প্যাকেজিং

100% সিকিউর চেকআউট

বিকাশ / নগদ / ব্যাংক / ক্যাশ অন ডেলিভারি

WhatsApp