ব্র্যান্ডিং কি

ব্র্যান্ডিং কি? পণ্য ও সেবা বিপণনে ব্র্যান্ডিং-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

ব্র্যান্ডিং কী?

ব্যবসায়িক জগতের প্রায় সব মানুষের মনে এই প্রশ্ন জাগে। সহজ কথায় বললে, ব্র্যান্ডিং হচ্ছে খামারের গৃহপালিত প্রাণী আলাদা করার মত প্রক্রিয়া। খামারে পশুপ্রাণী আলাদা করা এবং ব্যবসায়িক জগতে ব্র্যান্ডিং করার মাঝে তেমন কোনো তফাৎ নেই। একটি খামারে প্রায়ই পশুগুলো আলাদা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। এটা নানা কারণে হতে পারে। বিক্রি করার ক্ষেত্রে হতে পারে, চিকিৎসার কারণে হতে পারে। বেশিরভাগ সময়ই বিক্রি করার জন্য খামারিকে আলাদাভাবে তার সব গরু-ছাগল চিহ্নিত করতে হয়। একইসাথে এগুলো ইউনিক উপায়ে উপস্থাপন করতে হয়, যাতে এত এত পশুর ভিড়েও আলাদা করে চেনা যায়। ব্র্যান্ডিংয়ের কাজও এটাই।

ব্র্যান্ডিং কেন করা হয়?

সফল ব্র্যান্ডিংয়ের মূল কাজ হচ্ছে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বিশেষত্ব নিশ্চিত করা, স্বকীয়তার সঙ্গে সবকিছু উপস্থাপন করা। এক্ষেত্রে কাস্টোমারের মনে আপনার পণ্য/সেবার এমন একটি জায়গা তৈরি করে ফেলতে হবে, যেন তাদের কাছে মনে হয় আপনার প্রোডাক্টের মতো এমন কোনো প্রোডাক্ট নেই। আপনার পণ্যটি ইউনিক, এটি আলাদা, এর বৈশিষ্ট্য অনন্য। এভাবে নিজের পণ্যকে সবার কাছে তুলে ধরতে পারলেই আপনি একটি ব্র্যান্ডিং প্রোগ্রামকে সফল বলতে পারেন। মোটের ওপর নিজের পণ্য/সেবা ইউনিক, অনন্য, স্বকীয় করে দীর্ঘমেয়াদী সেল নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই ব্র্যান্ডিং করা হয়।

ব্র্যান্ডিং যেভাবে দীর্ঘমেয়াদী সেল নিশ্চিত করে

একটি ব্র্যান্ড কি সবার কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে? উত্তর হচ্ছে, না। এটা কখনোই সম্ভব নয়। একটি একক ব্র্যান্ড সার্বজনীনভাবে সবার নিকট আকর্ষণীয়, পছন্দের ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ব্র্যান্ডিংয়ের বৈশিষ্ট্যই এটা। আপনি নিজের ব্র্যান্ড নিয়ে বহু এক্সপেরিমেন্ট চালাতে পারেন, অনেক টাকা ব্যয় করতে পারেন এটির প্রোমোশন চালানোর জন্য। কিন্তু দিনশেষে এসব আপনাকে সার্বজনীনভাবে নিজের জায়গা তৈরি করতে সাহায্য করতে পারবে না কখনোই। তার মানে কি আপনার ব্র্যান্ডের সেল রেশিও বৃদ্ধি করার ক্ষমতা নেই? এমন ভেবে থাকলে ভুল করবেন। একটি ব্র্যান্ড সবার নিকট আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে না পারলেও একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর মাঝে এর আবেদন সবসময়ই থাকবে। আর এটাই আপনার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট সেলিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা দিতে সক্ষম। এই কারণেই মার্কেটিং সেক্টরে ব্র্যান্ডিং বেশ জনপ্রিয়। ব্র্যান্ডের একক বিশেষত্বের কারণে যেমন সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ড সবার নিকট আকর্ষণীয় হতে পারে না, তেমনই একই কারণে এটি ব্যবসায়িক সেল রেশিও বৃদ্ধি করতে সক্ষম। একইসাথে কার্যকরী ব্র্যান্ডিং দীর্ঘমেয়াদে সেল নিশ্চিত করে।

ব্র্যান্ডিং যেভাবে কোম্পানিকে সফলতা দেয়

সবসময় পণ্য বিক্রি আপনাকে বড় ব্যবসায়িক সফলতা এনে দেবে, তা নয়। বরং ব্র্যান্ডিং এই ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে। আপনি কি ১০০ ডলার মূল্যে রোলেক্স ঘড়ি বিক্রি করতে পারবেন? অবশ্যই পারবেন। গণহারে এটি বিক্রি হবে। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ তখন রোলেক্স ঘড়ি কেনার জন্য লাইন দেবে। কিন্তু এতে করে আপনার পণ্য বিক্রিতে চূড়ান্ত সফলতা আসবে? একেবারেই না। কেননা, এই সস্তা দামের কারণে রোলেক্সের ব্র্যান্ড ভ্যালু একদম নিচে চলে যাবে। আরো সহজ করে বলতে গেলে সস্তা দরের রোলেক্স এক্সপেন্সিভ রোলেক্স ব্র্যান্ডকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলবে। তার মানে হচ্ছে গণহারে সেল নয়, সার্বজনীন মানুষের কাছে আকর্ষণীয় নয়, বরং ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি করলে সুনির্দিষ্ট একটি কাস্টমারবেইজের দ্বারাও প্রচুর পরিমাণ রেভিনিউ নিশ্চিত করা সম্ভব। এভাবেই ব্র্যান্ডিং আপনার পণ্যটিকে একক বিশেষত্ব দেয়, একক গোষ্ঠীর কাছে সীমাবদ্ধ রাখে, কিন্তু বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়েরও সুযোগ সৃষ্টি করে।

২২ সিক্রেট অব ব্র্যান্ডিং
ব্র্যান্ডিং এর ২২টি গোপন সূত্র আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। অর্ডার করতে ছবিতে ক্লিক করুন।

ব্র্যান্ড বিল্ডিং না করলে যা হতে পারে

ওপরের সূত্রটি মার্কেটিংয়ের সব সেক্টরের জন্যই প্রযোজ্য। গতানুগতিক সব ধরনের মার্কেটিং গণহারে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডকে সেল এনে দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে এগুলো সেই ব্র্যান্ডেরই ক্ষতি বয়ে আনে। আপনি হয়তো ভাবছেন এত এত সেল নিশ্চয়ই কোম্পানিকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু না। দিনশেষে কোম্পানি আরো ডাউন হওয়ার দিকে চলে যায়। এমনকি সেল কমতে থাকে। যদিও খালি চোখে এসব বোঝার উপায় থাকে না। গতানুগতিক মার্কেটিংয়ে সবাই সেল করার দিকে মনোযোগ দেয় বেশি। অনেক পণ্য সেল করাই হচ্ছে তাদের লক্ষ্য। কীভাবে গণহারে নিজের পণ্য সেল করা সম্ভব, এইদিকেই নজর থাকে সবার। অথচ এই মনোযোগ দেওয়ার দরকার ছিল ব্র্যান্ড বিল্ডিংয়ের দিকে। ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে যদি সব মনোযোগ থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটি কোম্পানির সফলতা তরতর করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। মানুষ একসময় আপনার ব্র্যান্ড কেনে, প্রোডাক্ট নয়। কেননা ততদিনে আপনার ব্র্যান্ডের ওপর তারা আস্থাশীল হয়ে নির্ভর করতে পারে। আর এই কাজটি করা সম্ভব হয় ব্র্যান্ড বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে।

মার্কেটিংয়ের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্র্যান্ডিং

একটা কথা সবারই মাথায় রাখা দরকার। মার্কেটিং মানে সেলিং নয়। মার্কেটিং হচ্ছে ব্র্যান্ডিং। মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্র্যান্ডিং করা। এটা করতে না পারলে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে বিজ্ঞাপন, ওয়েব ডিজাইন, পিআর, প্যাকেজিং, সেলস প্রোমোশনের মতো কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও আপনার কোনো লাভ হবে না। আপনি আপনার আসল উদ্দেশ্য তথা বড়সড় সফলতা পাবেন না। টিকে থাকতে পারবেন না। মার্কেটিংয়ের মূল উদ্দেশ্যই কাস্টমারের মনে একটি শক্তিশালী জায়গা তৈরি করা, সেইসাথে নিজেদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানো। একটি পাওয়ারফুল ব্র্যান্ডই আপনাকে নিজের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করতে সক্ষম। এর বাইরে আপনি কোনোদিনই নিজেকে সেরা স্তরের নিতে পারবেন না।

মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্যকে সেলিং বানিয়ে নিলে হয়তো খালি চোখে আপনার মনে হবে আপনি ভালোই লাভবান হচ্ছেন। আপনার সেল হচ্ছে। টাকা আয় করছেন। বেশ ভালো কথা। কিন্তু ব্র্যান্ড হিসেবে শক্তিশালী জায়গা না থাকলে কোনো লাভ নেই। মার্কেটিংয়ের কাজই হচ্ছে আপনার ব্র্যান্ড বিল্ডিং করা। এই দুটি বিষয় পরস্পরের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে, আপনি চাইলেই আলাদা করতে পারবেন না। বড়জোর উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যেতে পারবেন, যেমনটা মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্যকে সেলিং বানানোর মাধ্যমে করে থাকেন আপনি। যেহেতু প্রতিটি কোম্পানিই মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ব্র্যান্ড বিল্ডিং প্রসেসের কাজ করতে থাকে, সেহেতু মার্কেটিংকে আলাদাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মার্কেটিংয়ের প্রসঙ্গে এলে ব্র্যান্ডিং এমনিতেই চলে আসবে। আবার ব্র্যান্ডিংয়ের কথা বলতে গেলেই মার্কেটিংয়ের টপিক টানতে হবে।

মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং পরস্পর সংযুক্ত

মার্কেটিং হচ্ছে সব কোম্পানির সর্বশেষ গন্তব্য। মার্কেটিং ব্যতীত কোনো কোম্পানিই নিজেদের শক্তিশালী ভিত দাঁড় করাতে সক্ষম নয়। কোনো কোম্পানিই মার্কেটিং ব্যতীত নিজেদেরকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিতে পারবে না, কোম্পানি টিকিয়ে রাখতে পারবে না। নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে হলে মার্কেটিং করতেই হবে। শুধু মার্কেটিং নয়, সফল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিচালনা করতে হবে। এসব ব্যতীত কিছুই সম্ভব না। এই কারণে সব কোম্পানিই মার্কেটিংয়ের দিকে সর্বশক্তি বিনিয়োগ করে ঝুঁকে থাকে। এবং তারা সবাই-ই ব্র্যান্ডিংয়ের সব সূত্র ফলো করে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে নেয়।

যদি একটি কোম্পানির সবগুলো ডিপার্টমেন্ট মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট হয়ে যায়, তাহলে এগুলোর পুরোটাই আবার একইসাথে ব্র্যান্ডিং ডিপার্টমেন্ট। যদিও এখন এই কথাটি অনেকের কাছেই অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা হয়তো এমন দিনও দেখতে পারি যখন মার্কেটিংয়ের সবকিছু নতুনভাবে দেখা হচ্ছে এবং ব্র্যান্ডিং শব্দটি এটির রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ট্রেন্ড চালু হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই ট্রেন্ডের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে, পণ্য বিক্রিকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা মানুষের কমে আসবে।

ব্র্যান্ডিং ইজ ইকুয়াল টু সেলিং

আমি বলছি না পণ্য বিক্রি করা খারাপ, পণ্য বিক্রি করবেন না। পণ্য বিক্রি করা ব্যতীত আপনার কোম্পানি কখনোই এগিয়ে যাবে না। তাই বলে শুধু পণ্য বিক্রি করার জন্য মার্কেটিং করবেন, এটা আপনাকে সফলতা এনে দেবে না। শুধু বিক্রিকে কেন্দ্র করে নিজের সব মার্কেটিং প্ল্যান সাজানোর মানে হচ্ছে টাইটানিক জাহাজের মতোই ধীরে ধীরে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলা। ঠিক ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই আপনার মনে হবে আপনি ভেসে আছেন, ঠিক আছেন। অথচ আপনি নিজেও জানতে পারছেন না ধীরে ধীরে সবকিছু শেষ হচ্ছে। বর্তমানে মানুষ শুধু একটি ব্র্যান্ডের পণ্যই কেনে না, সেইসাথে আরো অনেক কিছুই কেনে। এইদিক থেকে চিন্তা করলে ব্র্যান্ডিংও এক ধরনের সেলিং। তবে গতানুগতিকভাবে নয়, একটু আলাদাভাবে। ব্র্যান্ডিং হচ্ছে কাস্টমারের মনের মাঝেই প্রি-সেল করার কাজ। এটা গতানুগতিক সেলিংয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কিছু। আপনি যখন সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের পারফেক্ট ব্র্যান্ডিং করতে সক্ষম হবেন, তখন কাস্টমারের মনে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একটা জায়গা তৈরি হবে আপনার প্রোডাক্টটি কেনার জন্য। কাস্টমার আপনার পণ্যটি কেনার জন্য ভেতর থেকে আকাঙ্ক্ষা অনুভব করবে। তারা আপনার ব্র্যান্ডটি ভালোবাসবে, পছন্দ করবে। আপনার ব্র্যান্ডের কিছু কিনলে তাদের মনের মাঝে এক ধরনের শান্তি অনুভূত হবে। সবই সম্ভব হবে, যদি পারফেক্টলি আপনার ব্র্যান্ডটির ব্র্যান্ডিং করতে সক্ষম হন আপনি।

শুধু প্রোডাক্ট বিক্রিই কোম্পানির প্রকৃত সফলতা নয়

বিজনেসের বাজারে পুরোনো একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। বলা হয় ‘কিছুই ঘটে না যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সেল নিশ্চিত না হয়’। এই কথাটি এবার বদলে দেওয়া দরকার। গতানুগতিক এই কথার বিশ্লেষণ করলে সাময়িকভাবে ইতিবাচক কিছু পাওয়া সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদে ভালো কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। কেননা সেলই আপনার সব নয়। তার চেয়েও বেশি কিছু আপনাকে করতে হবে। এই কারণে বলা উচিত ‘কিছুই ঘটে না যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিজের কোম্পানির পারফেক্ট ব্র্যান্ডিং করতে সক্ষম হয়’। একমাত্র পারফেক্ট ব্র্যান্ডিং করার দ্বারাই সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ড লম্বা সময় নিয়ে টিকে থাকতে পারে। নয়তো বিজনেসের প্রতিযোগিতার বাজারে কারো পক্ষেই টিকে থাকা সম্ভব নয়। পুরোনো স্লোগানকে বদলে দিয়ে তাই এখন থেকেই নতুন স্লোগানকে ধারণ করে নিজের মার্কেটিং কার্যক্রম সাজাতে হবে।

একটি সুপারমার্কেট অথবা ওষুধের দোকানই উদাহরণ হিসেবে নিন। সচরাচর মানুষ সুপারমার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য। ওষুধের বাজারগুলোতেও বাছাই করে তারা সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এবার আমাকে বলুন, এখানে সেলিং কোথায়? সবাই বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দিয়ে কেনাকাটা করে চলেছে, সবাই-ই নিজেদের পছন্দের ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র নেয়। তাহলে ওপরের প্রশ্নটি আসা স্বাভাবিক। এর উত্তর হচ্ছে, ব্র্যান্ডিংয়ের মাঝেই সেলিংয়ের অবস্থান। অর্থাৎ আপনি যদি নিজের কোম্পানির ব্র্যান্ডিং ঠিকঠাক করতে পারেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার প্রচুর সেল হবে।

মানুষ আজকাল ব্র্যান্ডের নাম দেখে। ব্র্যান্ডটি বাজারে কতটুকু ভ্যালুয়েবল এসব তারা জেনে নেয়। কেনাকাটা করার সময় বহু মানুষের রেফারেন্স নেয়। ওষুধের ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে। ডাক্তাররা যেসব নামিদামি ব্র্যান্ডের কথা কাস্টমারকে জানান, কাস্টমার সেসব ব্র্যান্ডের ওষুধই কেনেন। এই ব্র্যান্ডগুলো কি সহসাই নিজেদের ব্র্যান্ডভ্যালু তৈরি করতে পেরেছে? পারেনি। তারা কি শুধু সেল করার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলো? এটাও না। বরং নিজেদের ব্র্যান্ডিং করার কাজে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছিলো তারা।

সুপারমার্কেটে একটা বিস্ময়কর পরিবর্তন বহুদিন ধরেই চলে আসছিলো। এখনো হচ্ছে। সুপারমার্কেটগুলো এখন নিজেদের পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে একরেট সিস্টেমের ব্যবহার করে। তারা সুনির্দিষ্ট রেট সেট করে দেয়, সেই রেট অনুসারে কাস্টমাররাই নিজের পণ্য নিয়ে নেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো সেলস পারসনের সাহায্য ছাড়াই এখন প্রোডাক্ট সেল করা হচ্ছে। কেননা কাস্টোমার সুনির্দিষ্ট প্রোডাক্টের মূল্য জানে, সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানে। এগুলো নিয়ে তারা সবসময়ই বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই গবেষণা করতে থাকে।

কসমেটিক কাউন্টার, ওষুধপত্র, ইলেকট্রনিক পণ্যসহ নানা ধরনের পণ্য এখন সুনির্দিষ্ট রেট সেট করেই বিক্রি করা হয়। ব্র্যান্ড ভ্যালু থাকার ফলে সেসব নিয়ে মানুষ কোনো দামাদামি করে না। তারা জানে দামাদামি করার কোনো সুযোগ নেই। দামাদামিও নেই, ঝামেলাও নেই। কাস্টমার নিজেদের পণ্য নিচ্ছে, তারপর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পে করে দিচ্ছে। ব্র্যান্ডিং ছাড়া এগুলো কখনোই সম্ভব ছিলো না। একমাত্র ব্র্যান্ডিংয়ের দ্বারাই এই ধরনের পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

এভাবেই সব রিটেইলশপ পরিণত হচ্ছে সুপারমার্কেটে। এই পরিবর্তনটা সহসাই আসা সম্ভব নয়। এই পরিবর্তনটা গণহারে ব্র্যান্ডিংয়ের সফলতার কারণেই হয়েছে। আজকাল বাজারে গেলেও আপনি জিজ্ঞেস করেন- এটা কি ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট? মানে আপনি মূল ফোকাসটা একজন ক্রেতা হিসেবে ব্র্যান্ডের দিকেই দিয়ে থাকেন। তাই একটি কোম্পানি যদি ঠিকঠাক ব্র্যান্ডিং করতে না পারে, তাহলে সেখান তাদের ব্যবসায়িক সফলতা ও ওপরের অবস্থান নিশ্চিত করা বর্তমান সময়ে খুব জটিল।

ব্র্যান্ডিং নিয়ে কতিপয় মিসকনসেপশন

কিছু ম্যানেজার মনে করে থাকেন, ব্র্যান্ড হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির সাথে নিজেদের কোম্পানির তফাৎ। অবশ্যই নামের দিক দিয়ে। ব্র্যান্ড শুধুই অন্যান্য কোম্পানির থেকে নিজেদেরকে আলাদা করার একটি প্রয়াস। এর বেশি কিছু নয়। এই ধরনের চিন্তাভাবনা করা লোকও আপনি ব্যবসায়িক সেক্টরে দেখতে পাবেন। ব্যাপারটা পুরোপুরি স্বাভাবিক।

বছরখানেক আগে একটি সফল কোম্পানির বিজনেস এনালিস্ট আমাকে বলেছিলেন- তারা তাদের কোম্পানির নামের ভেতরেও নিজেদের ব্র্যান্ড বানিয়ে নিয়েছেন। কোম্পানির নামের ভেতরেও আরো ব্র্যান্ডনেইম? এই কথাটির মানে আসলে কী? কিছুই না। সত্যি বলতে কাগজে-কলমে একটি কোম্পানির নামের নানান শাখাপ্রশাখা থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে প্রাকটিক্যাল জগতে এসবের কোনো তফাৎ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে কোম্পানির নাম, প্রোডাক্ট ব্র্যান্ড ও ব্র্যান্ডনেইমের মাঝে কোনো তফাৎ নেই। অবশ্যই মার্কেটিংয়ের জগতে নানা ধরনের নামের ডিভিশন থাকে। কোম্পানি নেইম, ডিভিশন নেইম, ব্র্যান্ডনেইম, মডেল নেইম। এছাড়াও মেগা ব্র্যান্ডনেইম, ফ্ল্যাঙ্ক ব্র্যান্ডনেইম ইত্যাদি। এমন নানা ধরনের নাম থাকে। এসব মেনশন করা প্রয়োজন বলে মনে করছি না। কেননা মার্কেটিং সেক্টরে যদিও এগুলো ব্যবহার করা হয়, তবে মানুষের মাঝে এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সাধারণ মানুষ নিজেদের পণ্য কেনার দরকার, পণ্য কেনে। তারা নিজেদের প্রয়োজনকে সবচেয়ে বড় করে দেখে, চাহিদা পূরণ করে। এত এত ডিভিশন দেখার সময় তাদের নেই। এই কারণে সুনির্দিষ্ট একটি নামই তাদেরকে মনে জায়গা দখল করার জন্য আরো বেশি কার্যকরী হয়। আপনি মার্কেটিং করার সময় ফ্ল্যাঙ্কার ব্র্যান্ড, মেগাব্র্যান্ড শব্দগুলো ব্যবহার করতেই পারেন। এসবের ডিভিশন তৈরি করে চালাতে পারেন নিজের মার্কেটিং কার্যক্রম। কিন্তু তাতে কোনো লাভ নেই।

ব্র্যান্ড সম্পর্কে গারট্রুড স্টেইন বলেছেন- ‘একটি ব্র্যান্ড হচ্ছে একটি ব্র্যান্ড।’ অর্থাৎ ব্র্যান্ড হচ্ছে একটি শব্দ। সুনির্দিষ্ট শব্দই আপনার ব্র্যান্ডকে পরিচিত করিয়ে থাকে। একটি ভালো শব্দই হয়ে ওঠে আপনার ব্র্যান্ডের জন্য সব কিছু। আপনি যদি একটি ব্র্যান্ডকে দাঁড় করাতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই সুন্দর নাম ব্যবহার করে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। মানুষ সেই নামটিকেই মনে রাখে। ওই নামের ওপর ভিত্তি করেই কাস্টমারের মনে জায়গা রচিত হয়ে যায় সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের। এর বাইরে কাস্টমার আপনার আর কিছুই মনে রাখতে পারে না।

ব্র্যান্ড নেইম নির্বাচন করবো কীভাবে?

সফল ব্যবসার জন্য উপযুক্ত ব্র্যান্ড নেইম নির্বাচন করা জরুরী। যেকোনো শব্দই একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে সুন্দর নাম নির্বাচন করা জরুরী। আপনি চাইলে যেকোনো নাম রাখতে পারেন, তবে সেটা অর্থবহ হতে হবে। এই যেমন পাতাগোনিয়া একটি ব্র্যান্ডের নাম। এটি একটি ক্লথিং ব্র্যান্ডের নাম। আবার একই নামে আর্জেন্টিনা ও চিলির টুরিস্ট ইন্ডাস্ট্রিতে এই ব্র্যান্ড রয়েছে। আর্জেন্টিনা ও চিলি তাদের দর্শনীয় স্থানগুলোর ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে সবসময়ই সচেষ্ট। ফিলাডেলফিয়া একটি চিজ ক্রিম ব্র্যান্ডের নাম। আবার এটি একটি ব্রাদারলি সিটির ব্র্যান্ডনেইম।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রি করা ব্র্যান্ড রয়েছে ২.৫ মিলিয়ন। এর বাইরেও লক্ষ লক্ষ নাম রয়েছে, যেগুলো ব্র্যান্ড হিসেবেই প্রচলিত। এসব ব্র্যান্ড সব জায়গা জুড়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাই বলে ব্র্যান্ড নেইম কিন্তু এসবের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। ব্র্যান্ডের বিস্তৃতি আরো বিশাল জায়গা জুড়ে। যেকোনো ভালো নামই একটা ব্র্যান্ড। আপনার নামটাই হয়ে উঠতে পারে একটি ব্র্যান্ড। আপনি যদি সুন্দরভাবে নিজের জীবন কাটান, আপনার জীবন থেকে যদি শেখার মতো কিছু থাকে, আপনি যদি নিজের সৃজনশীলতার নানা জিনিসপত্র সেল করতে সক্ষম হন, তাহলেও আপনার নামটাও ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে প্রচলিত হয়ে উঠবে।

তবে মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়া ব্র্যান্ড আর বাজারে জিনিসপত্রের গায়ে সিল লাগানো ব্র্যান্ডের মাঝে প্রচুর তফাৎ রয়েছে। এটা আপনাকে মানতে হবে। আপনি যত ভালোভাবে বিষয়টা বুঝতে পারবেন, ততই নিজের ব্র্যান্ডটি প্রোডাক্টের গায়ে একটি সিল হিসেবে নয়, বরং মানুষের মনে জায়গা দখল করার মতো শক্তিশালী করে নেবেন।

ব্র্যান্ড সম্পর্কে মজার একটি তথ্য

ব্র্যান্ড সম্পর্কে একটি মজার ব্যাপার হলো কমোডিটি পারচেজকে সাধারণত ব্র্যান্ড মনে করে না সাধারণ মানুষ। তারা এগুলো নিয়ে সেই পর্যায়ের চিন্তাভাবনা করে না। উদাহরণস্বরূপ- একজন মানুষ হয়তো সন্ধ্যা সাতটায় রুটি এবং দুধ কিনে থাকবে। এখানে তারা দুটি ব্র্যান্ড কিনে নিচ্ছে। তবে এসব নিয়ে কাস্টমারের কোনো মাথাব্যথা নেই। দুধ আর রুটি পাওয়া হলেই হলো। এগুলো নিয়ে তারা জিজ্ঞেস করবে না যে, এগুলোর ব্র্যান্ড কী? এটা সচারাচর মানুষ জিজ্ঞেস করে না। বিপরীতে কেউ যদি সিগারেট আর মদ কিনতে যায়, তাহলে ঠিকই ব্র্যান্ডের খোঁজ করে। মূলত ব্র্যান্ডের নামেই তারা এসব কিনে। এই কারণে সিগারেট আর মদ হচ্ছে বায়িং ব্র্যান্ড। এগুলো কমোডিটি পারচেজ নয়।

১১ সিক্রেট অব ইন্টারনেট ব্র্যান্ডিং
ইন্টারনেট ব্র্যান্ডিং এর ১১টি গোপন সূত্র আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। অর্ডার করতে ছবিতে ক্লিক করুন।

ব্র্যান্ডিংয়ের সামগ্রিক উপকারীতা

বর্তমানে ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী বিশাল জনপ্রিয় হয়ে গেছে। মানুষের হাতের নাগালে ইন্টারনেট চলে গেছে। ব্যবসা বাণিজ্যগুলোও অনলাইনে সক্রিয় হতে শুরু করেছিলো তখন থেকেই। এমনকি অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানি গড়ে উঠছিলো। এটা বেশ আশাবাদী হওয়ার মতোই ব্যাপার। এসবের ফলে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম সামনের দিনগুলোতে মার্কেটিং সেক্টরে ইন্টারনেটের প্রভাব থাকবে ব্যাপক। ইন্টারনেট হয়ে উঠবে ব্র্যান্ডিং ও সেলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম। কেননা ইন্টারনেটের নিয়মিত পরিসরে ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- সাউথইস্ট এয়ারলাইনসের ৩০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে অনলাইনে। ডেল কোম্পানির ৫০ ভাগ কম্পিউটার বিক্রির ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে অনলাইন। ৬৮ ভাগ গ্রিসকোর অর্ডার এসে থাকে অনলাইনের মাধ্যমে। তার মানে ব্র্যান্ডিংয়ের জগতে ইতোমধ্যেই ইন্টারনেট একটি দুরন্ত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।

লোকজন এখন আর খুঁতখুঁতে স্বভাবের নেই। তারা প্রায় সবকিছুই ইন্টারনেটের সাহায্যে কেনাকাটা করে। এমনকি গাড়িও কেনাকাটা করে ইন্টারনেটের সাহায্যে, কোনোরকম টেস্ট ড্রাইভ ছাড়াই। এসবের ফলে ইন্টারনেট হয়ে উঠেছে ব্র্যান্ডকেন্দ্রিক কাস্টমার টানার আলটিমেট মাধ্যম। মানুষ ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে আগে থেকেই অবগত থাকে। অথবা তারা ভালো ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানার জন্য সবসময়ই ইন্টারনেটের সাহায্য নেয়। তারপর পারচেজ সিস্টেম ফলো করে কেনাকাটা সেরে ফেলে। এতে করে সব ধরনের উটকো ঝামেলা থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব হয় তাদের পক্ষে।

এই বিপ্লব অটোমোবাইল সেক্টরে চলে এসেছে। শুধু অটোমোবাইল সেক্টরেই এমন হয়েছে, তা কিন্তু নয়। ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস সেক্টরেও একই ব্যাপার ঘটেছে। চার্লস শোয়াব, ই-ট্রেড, ফিডেলিটি ও ভ্যানগার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে মানুষ ইন্টারনেটের সাহায্য নানাবিধ লেনদেন চালিয়ে নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে সস্তায় সার্ভিস দিচ্ছে, অনলাইনে কাস্টমারের সাথে বিনিময় বাড়িয়েছে এবং স্টোকব্রোকারের ব্যবস্থা করেছে।

সময়ের পরিক্রমায় প্রোডাক্ট ও ব্র্যান্ডগুলোর ওপর ইন্টারনেট আরো বড়সড় প্রভাব রাখতে শুরু করবে। এমনকি ব্র্যান্ডিংকে আরো জোরালো করে তোলার অন্যতম নিয়ামক হয়ে দাঁড়াবে ইন্টারনেট। কেন? কারণ ইন্টারনেট ব্র্যান্ড হচ্ছে অদৃশ্য।

ইন্টারনেট আপনাকে সরাসরি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড প্রদর্শন করবে না। আপনি ব্রাউজারে প্রবেশ করলেই পছন্দের ব্র্যান্ডটি দেখতে পাবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে খুঁজে বের না করছেন। ইন্টারনেট আপনাকে নিজে এসে পছন্দের ব্র্যান্ড দেখাবে না। বরং আপনার ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি অনুসারেই আপনাকে নানা জিনিসপত্র দেখাবে। অর্থাৎ ইন্টারনেটে প্রবেশ করার পূর্বেই পছন্দের ব্র্যান্ডটি সম্পর্কে আপনাকে ধারণা রাখতে হবে, আপনার মাথায় সেটি থাকতে হবে। সুপারমার্কেট হোক কিংবা কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য খোঁজার কাজে হোক, শুরুতেই আপনার মনের মাঝে সেই ব্র্যান্ডটি থাকতে হবে। আপনি যদি সার্চ করেন, তাহলেই ইন্টারনেট আপনাকে সেটি প্রদর্শন করবে।

ইন্টারনেটে কোনোকিছু খোঁজার জন্য আপনি নিশ্চয়ই সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে থাকেন। সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেই নিজের ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন আপনি। সমস্যা হচ্ছে, আপনি যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ওয়েবসাইটের নাম না জানেন বা সেসব না খুঁজে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেট আপনাকে হাজারো ওয়েবসাইট দেখাবে। বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বহু ব্র্যান্ড তৈরি হয়েছে। এত এত বিজ্ঞাপনের ভিড়ে আপনি নিশ্চয়ই সবগুলো চেক করে সময় নষ্ট করবেন না, তাই না? অথবা আপনি যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডের নাম জানা থাকলে সরাসরিই সেই ওয়েবসাইটে ঢুকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারেন, তাহলে কোনো দুঃখে এতগুলো সাইট চেক করতে যাবেন? এটা একদিকে যেমন সময়ের অপচয়, আরেকদিকে কাস্টমারের পছন্দসই জিনিস পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা প্রদান করে।

ঠিক এই জায়গাতেই উদ্যোক্তা বা মার্কেটারদের একটি সুযোগ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ব্যবসা করার জন্য। বাস্তব জীবনে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড যদি নিজেদের ব্র্যান্ড মানুষের মনে গেঁথে দিতে পারে, তাহলে ইন্টারনেট জগতেও তাদের আধিপত্য বজায় থাকবে। আরো সহজ করে বলতে গেলে বাস্তব জগতে যারা এগিয়ে থাকবে, অনলাইনের জগতেও সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এটাই স্বাভাবিক।

একজন মানুষ যদি জানে বই কিনতে পাওয়া যায় আমাজনডটকমে, তাহলে তারা কেন ইয়াহুডটকমে ঢুকে সার্চ করবে ‘কোনো জায়গায় বই কিনতে পাওয়া যায়’? অবশ্যই এটা করবে না। তখন তারা সরাসরিই নিজের পছন্দসই বইটি কিনে

ফেলবে আমাজনডটকমে গিয়ে। এখম আমাজনডটকমে বই বিক্রি হয়, এটা মানুষের মনে গেঁথে দেওয়ার জন্যই লাগবে প্রপার ব্র্যান্ডিং। এটা রিয়েল লাইফে হোক কিংবা অনলাইনে, প্রপারলি ব্র্যান্ডিং করা যেকোনো কোম্পানির জন্য বেশ জরুরি।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাজনের মতো একটি ব্র্যান্ড বিল্ড করা কীভাবে সম্ভব? বাস্তব জগতে ব্র্যান্ড বিল্ডিং করার কাজটি কি ইন্টারনেটে নিজেদের ব্র্যান্ড বিল্ডিং করার মতোই? সবকিছু একই? নাকি আলাদা? আমরা মনে করি, অবশ্যই আলাদা নয়। বাস্তব জগতে যেসব পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের বেস্ট ব্র্যান্ডিং করতে পারবেন, সেসব আপনার ইন্টারনেট ব্র্যান্ড বিল্ডিং করার ক্ষেত্রেও কাজে দেবে। অর্থাৎ আপনি একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে দুটি ভিন্ন জগতে নিজের কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করতে সক্ষম হবেন।

সঠিক উপায়ে ব্র্যান্ডিং না করার কুফল

সাম্প্রতিক সময়ে ডটকম ডোমেইনধারী বহু সাইটই নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে তারা ব্র্যান্ডিংয়ের রুলসগুলো ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেনি। রিসেন্ট টাইমে যেসব ডট কম ডোমেইনধারী ব্র্যান্ড ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলো, তাদের কিছু উদাহরণ আপনাদের এখন জানাতে চাই। বার্নসঅ্যান্ডনোবেল ডটকম, ওয়ালমার্ট ডটকম, সিয়ার্স ডটকম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্র্যান্ডিংয়ের নিয়ম ভঙ্গ করেছিলো। ফলে এই সাইটগুলোর একটাও ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।

পেটস ডটকম, ফার্নিচার ডটকম, অকশনস ডটকম, ইটয়েজ ডটকম, হার্ডওয়ার ডটকমের মতো প্রতিষ্ঠান এবং আরো হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান মার্কেটিংয়ের রুলস ভঙ্গ করেছিলো। তারা কমন নাম ব্যবহার করেছিলো। ফলে কোনোভাবেই নিজেদের জন্য শক্তিশালী জায়গা তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়নি।

ফ্রি-পিসি, ফ্রি ইন্টারনেট ডটকম এবং আরো একটি হোস্টিংসাইট বাজারে ব্যবসা করতে না পারায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলো। তারা নিজেদেরকে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সময় দিতে পারেনি। ব্র্যান্ডিংয়ের রুলস ভঙ্গ করার শাস্তি তাদেরকে পেতে হয়েছিলো নিজেদের ওয়েবসাইটকে নষ্ট করার মধ্যে দিয়ে। তারা পরবর্তীতে আর মার্কেটে নিজেদের জন্য জায়গা তৈরি করে নিতে পারেনি।

এই তালিকা আরো লম্বা করা সম্ভব। বহু প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর কাজ করেও নিজেদের জন্য ভালো জায়গা তৈরি করতে পারেনি। বহু প্রতিষ্ঠান বেশ ভালো জায়গায় থেকেও একটা সময় পরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। এসব হয়েছিলো ব্র্যান্ডিংয়ের নিয়ম ভঙ্গ করার কারণে। ব্র্যান্ডিংয়ের নিয়ম ভঙ্গ করলে কোনো ব্র্যান্ডই নিজেদেরকে দাঁড় করাতে পারবে না। ইন্টারনেট জগতে হোক কিংবা বাস্তব জগতে, ব্র্যান্ডিংয়ের নিয়মগুলো ভঙ্গ হলে সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইন্টারনেট জগতে সব ওয়েবসাইটের হালই কী এমন হয়েছিলো? একদম না। আপনি যদি রিসার্চ করেন, তাহলে বহু প্রতিষ্ঠান পাবেন, যাদের অবস্থান আকাশ সমান ওপরে চলে গেছে ব্র্যান্ডিং ঠিকঠাক হওয়ার কারণে। ব্র্যান্ডিংয়ের নিয়মগুলো ভঙ্গ না করার কারণে তারা নিজেদেরকে সেরা জায়গায় নিতে সক্ষম হয়েছে। এমন কিছু ওয়েবসাইটের তালিকাও আমি আপনাকে দেখাতে চাই, যাতে আপনি নিজের ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে সবসময়ই সচেতন হয়ে কাজ করেন।

  • বইয়ের জগতে সফল ওয়েবসাইট আমাজন ডটকম।
  • অকশনের জগতে সফল ওয়েবসাইট ইবে ডটকম।
  • চাকরির জগতে সফল ওয়েবসাইট মনস্টার ডটকম।
  • ইন্টারনেট সার্ভিসের জগতে সফল ওয়েবসাইট আমেরিকা অনলাইন।

এই ওয়েবসাইটগুলো যেসব ব্র্যান্ডের আন্ডারে রয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিই পারফেক্টলি নিজেদেরকে সবার নিকট পরিচিত করাতে সক্ষম হয়েছে। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ওপরে উল্লিখিত সফল ও ব্যর্থ ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে তফাৎ কী? এক কথায় বললে, পারফেক্টলি ব্র্যান্ডিং। যারা সফলতার সাথে নিজেদের ব্র্যান্ডিং সম্পন্ন করতে পেরেছে, বাকিরা পারেনি। ফলে ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। সফলতার সাথে নিজের ব্র্যান্ডকে টিকিয়ে রাখতে হলে ইন্টারনেট ব্র্যান্ডিংয়ের নানা কৌশল সম্পর্কেও একজন মানুষকে ধারণা রাখতে হবে।

লেখকত্বাইরান আবির

তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট, ব্র্যান্ডিং বুকস, যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডিং পরিসংখ্যান, আর্টিকেল বাই গারট্রুড স্টেইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ক্যাশ অন ডেলিভারি

সারা বাংলাদেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা

সহজ রিটার্ণ ও রিফান্ড পলিসি

পণ্য প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে সহজ রিটার্ন সুবিধা

গ্যারান্টি ও নিশ্চয়তা

গুণগত মানের নিশ্চয়তা ও নিরাপদ প্যাকেজিং

100% সিকিউর চেকআউট

বিকাশ / নগদ / ব্যাংক / ক্যাশ অন ডেলিভারি

WhatsApp